Breaking

শনিবার, ৬ মে, ২০১৭

এবারের এস.এস.সি রেজাল্ট, আমাদের মানসিকতা আর কিছু হতাশাগ্রস্থ ছেলেমেয়ের আত্মহত্যা


সবসময় তো টেকনোলজি নিয়ে লিখি। আজ একটু ব্যতিক্রম কিছু নিয়ে লিখলাম। কারণ লিখাটা অনেক জরুরী মনে হলো। টেকনোলজি ব্লগে এ ধরনের পোস্টের জন্য দু:খিত।
আমাদের জীবন ব্যবস্থা, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সবকিছু পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। বদলে যাচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থার ধরণ। এই দেশে এখন শুধু কে কয়টা সোনা অর্জন করেছে সেটাই দেখা হয়। মাথায় কি গোবর নাকি ইউরিয়া তা পরীক্ষার করে দেখার সময় নেই। সোনা দিয়ে যদি মানুষ মূল্যায়ন করতে যান তাহলে ফেনীতে যে দুইটা মেয়ে আত্মহত্যা করেছে তাদের ঘটনা গুলোই বার বার পুনরাবৃত্তী হবে। অবশ্য এদেশের একজন ক্ষুদ্র সচেতন নাগরিক হিসেবে আমি নিজেকে অনেক আগেই বদলে নিয়েছি এধরনের মানসিকতা থেকে। ক্লাস টু এর বইতে যোগ অংক আছে। আপনার বাচ্চা, ছোটা ভাই বোন কিংবা অন্য কেউ যখন ক্লাস টু তে আছে তার কি দরকার? যোগ অংক শেখা নাকি ক্লাসের ফার্স্ট বয় হওয়া? মনে রাখবেন একটা ক্লাসের যখন সব ছেলেমেয়েই ফেল করবে তখনও তাদের মাঝে কিন্তু একজন ফার্স্ট বয় থাকবে। তাই নিজের বাচ্চাকে ফার্স্ট বয় বানানোর চিন্তা থেকে সরে আসুন। তার যা শেখার দরকার সে তা শিখছে কিনা সেটা দেখুন। ক্লাসে যদি তা শিখতে না পেরে নিজে শিখিয়ে দিন। ফার্স্ট বয় বানানোর জন্য বাচ্চাকে কখনো জোর খাটাতে যাবে না। তাহলে ও যা অর্জন করবে তা শিক্ষা নয়। ও শিখবে কিভাবে গরুকে দিয়ে জোর করে হাল চাষ করাতে হয়। চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করুন। আপনার বাচ্চা যেটা ভালো পারে তাকে তাই করতে দিন। ফার্স্ট বয় বানানোর জন্য তাকে সারাদিন বইয়ের মধ্যে চেপে ধরে রাখবেন না। নয়তো শুধু ফার্স্ট বয়ই হবে জীবনে সফলতা পাবেনা। এস.এস.সি তে ফেল করায় ফেনীর সোনাগাজীতে যে দুইটা মেয়ে আত্মহত্যা করেছে তাদের এ মৃত্যুর দায় কি এ সমাজ নিবে। আমরা নিবো? কিন্তু তাদেরকে তো আমরাই হত্যা করেছি। আমাদের চিন্তা চেতনাই তাদের আত্মত্যার পিছনে ইন্দন দিয়েছি। কারণ আমরা শুধু কে পরীক্ষায় পাশ করলো আর কে কয়টা সোনা অর্জন করলো তা নিয়েই পড়ে থাকি। এই মেয়েগুলোর মধ্যে হয়তোবা এমন কেন ক্রিয়েটিভিটি ছিল যা আমাদের মধ্যে নেই। আর একটা ফেল দিয়েই কি জীবন কে মূল্যায়ন করা যায়? নাকি একটা গোল্ডেন এ প্লাস দিয়েই বড় কিছু হয়ে যাওয়া যায়? মোটেও না। এগুলো ভুল ধারণা। এ ধরনের চিন্তা থেকে সরে আসুন। নয়তো আপনার ছেলেমেয়েও এ কাজ করে বসবে। তাদেরকে শিখান জীবনে বড় হওয়ার জন্য এস.এস.সি এর রেজাল্ট নয় তুমি কি পারো সেটাই আসল। তোমার স্কিলই তোমাকে একদিন ভালো একটি জায়গায় পৌঁছে দিবে। আমি আমার বোনকে বলে দিয়েছি আমি তোমার রোল নাম্বার দিয়ে ধুয়ে পানি খাবনা। তুমি তোমার ক্লাসের পড়া গুলো বুজতে পারো কি না কিংবা তোমার অংকের বই তে যে অংক আছে তা বাস্তব জীবনে ব্যবহার করতে পারো কিনা আমি সেটাই দেখবো। কারণ আমার কাছে স্কিলটাই আসল।
আসুন আমরা আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন করি। যে ছেলেমেয়েগুলো এবার পরীক্ষায় খারাপ করেছে তাদের পাশে আপনি মানসিক শক্তি হয়ে দাঁড়ান। তাদেরকে ভরসা দিন। তাদেরকে বুজান যে একটা রেজাল্ট দিয়েই সমস্ত জীবনকে মূল্যায়ন করা যায় না। জীবন আল্লাহর বড় একটা নেয়ামত। আমাদের প্রত্যেকেরই আমাদের আশেপাশের মানুষের জন্য অনেক কিছু করার আছে। এই জীবনকে যদি শেষ করে দিই তাহলে সেই দায়িত্ব কে পালন করবে???? প্রশ্নটা আপনাদের কাছেই রাখলাম।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন